রবির জীবনে ঘটে যাওয়া অসাধারণ Bangla Sad Story (পরে থাকা অসমাপ্ত গল্প)। এটা মূলত একটা কষ্টের গল্প। এই Bangla story থেকে অনেক কিছু জানার আছে।
হটাত একটা কুয়াশা ঢাকা সকালে মা অঝোরে কাঁদছে।
মা কেন কাদে আমি জানি না তবে পাশে বাবা শুয়ে আছে। সবাই আমাকে জড়িয়ে কাদে তাই আমিও কাদি। নতুন নতুন অনেক আত্মীয়
আসছে কিন্তু তাদের মধ্যে থেকেও অনেকে কাদে। সব কিছু আজব লাগছিল কিন্তু কিছু ঘণ্টা
পর বাবাকে সবাই নিয়ে যায়! কোথায় নিয়ে যায় বাবাকে ? অবুঝ প্রশ্ন তারপর দেখি
গোরস্তানে নিয়ে বাবাকে একটা গর্তে রেখে আসলো কিন্তু আমি বাবাকে ছাড়া যাবো না। জোর
করে আমাকে বাড়িতে আনা হল।কিছু সময় পর দেখি আত্মীয় গুলা সব চলে যাচ্ছে। মা কাঁদছে,
পাশে বড় ভাই আর ভাবি আছে। বাড়ির পরিবেশটা কেমন যেন হয়ে গেছে।
আমার ভাল
লাগছে না তাই খেলতে গেলাম। বিকালে বাড়ি এসে দেখি মা আরো কাঁদছে।বাবাও নাই। তখন যে বাবা
কে রেখে আসলো যাই বাবাকে নিয়ে আসি এই বলে আমি চলে গেলাম গোরস্থানে। বাবার গর্তে
মাটি ভরা। নিজে চেষ্টা করলাম কিন্তু তুলতে পারলাম না তাই গোরস্থানের এক পাশে বসে
রইলাম দেখি বাবা কখন ওঠে তারপর বাবাকে নিয়ে বাড়ি যাবো আর মা কে কাদতে মানা করবো।
কিন্তু সন্ধ্যা হয়ে যায় বাবা ওঠে না। আমাকে মা সব জায়গায় খোজার পর গোরস্থানে পেল
আমাকে নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আমি মা কে বলি বাবা আসবে না?
আমার এমন প্রশ্নে মায়ের মুখটা যেন আরো মলিন হয়ে গেল। রাতে খাওয়ার পর গুমাতে
গেলাম মা কে বললাম বাবা কই? বাবা আসলে আমাকে ডাকবে। আজ আমাকে চকলেট দিল না। বাবাও
আর আসে নাই মাও আমাকে ডাকে নাই।
পরেরদিন সকাল মা কাঁদছে এবার আর বাবা পাশে শুয়ে নাই। দরজার সামনে ভাই আর ভাবি
দাড়িয়ে। কিছুদিন পার হল বাবা বিহীন। তারপর ভাই আর ভাবির বাক্য আর বসে বসে নবাব-জাদীরমত
খাওয়াতে পারবো না সহ আরো অনেক কথা। মা কাঁদছে।মা পড়াশোনা জানে না তাই
সহজে কোন কাজ ও জোটে না এজন্য মা কোন কাজই খুঁজে পেল না।বাবার রেখে যাওয়া বাড়ি
ছাড়া আর কিছুই নাই।
এভাবে অনেক বছর কেটে গেল।বাবা মরে যাওয়ার পর কোনদিন ৩ বেলা খেতে পারি নাই। ঈদ
ছাড়া কোনদিন একটা নতুন জামা পাই নাই।মা নিজের বাড়িতে হয়ে গেল চাকরানি। এই কয়েক বছরে কি কি ঘটেছে টা হয়তো নাই
জানলেন আপনারা।
এখন মায়ের চেহারাটা পোড়া কয়লা আর খশখশে হয়ে গেছে। শরীরে শক্তি কমে গেছে। চোখেও
ভাল দেখে না। আমাকে ওয়ার্কশপ এর কাজে দিয়েছে আমি ১৫ দিন পর পর বাড়ি যাই। যা টাকা
পাই টা মাকে দেই আর আমি কিছু রাখি।
একদিন মা আমাকে বলে রবি তুই আমাকে তোর কাছে নিয়ে যাবি, আমি আর এখানে থাকতে
পারছি না। মাকে বললাম, আচ্ছা, আমি মালিক কে বলবো।তারপর মালিক কে বলে ছোট একটা বাসা ঠিক করলাম কিন্তু মাকে ভাই আর ভাবি আসতে
দেবে না।
আপনারা ভাবছেন ভাই-ভাবি অনেক ভালবাসে? না! মা চলে গেলে অনেক কাজ ভাবিকে
একা করতে হবে তাই। জোর করেই মাকে নিয়ে আসলাম। বাসাতে উঠলাম কিছুদিন ভালভাবেই দিন
কাটল তারপর মায়ের পাগলামি শুরু হল ভাবলাম মা মনে অনেক কষ্ট করছে তাই সব মনে পরে
আবোল-তাবোল বলে আর কাদে।
তারপর গ্রামের ডাক্তার দেখালাম কিন্তু কাজ হল না। টাকা নাই বড়
ডাক্তার কিভাবে দেখাবো। কবিরাজের কাছে গেলাম তাতেও কাজ হল না। মালিক কে সব বললাম
কিন্তু মালিক বলল এত টাকা দিলে কিভাবে শোধ করবি? মালিক টাকা দিতে রাজি না।
তারপরও
মালিকের কাছে আকুতি-মিনতি করে কিছু টাকা নিলাম। মাকে নিয়ে গেলাম বড় ডাক্তারের কাছে
ডাক্তার অনেক গুলো টেস্ট করতে দিল। সব কিছু করে দেখি মায়ের ২টা কিডনি নষ্ট।
ডাক্তার বলল যদি একটা কিডনির ব্যবস্থা করা যায় তাইলে ভাল হয়ে যাবে। মাকে এতকিছু জানাইনি। চলে
এলাম বাসায়। মালিকের কাছে সব খুলে বললাম, মালিক বলল কিডনি কই পাবি আর এত টাকা
কিভাবে জোগাড় করবি।
সব শুনে চলে এলাম ভাইয়ের কাছে। ভাই আর ভাবি সব
শুনেই তো ভেচাং মেরে কথা শুরু করলো আর তার সংসারের নানান সমস্যা দেখাতে শুরু
করলো।চলে গেলাম আত্মীয় স্বজনের কাছে তারা কেও আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনল না। কেও
শুনেও না সোনার ভান ধরে আর কেও কেও সব শুনেও কোন সাহায্য না করে বলে দেখো কি করা যায়।
এলাকার
অনেক টাকা ওলা মানুষের কাছে গেলাম তাদের কাছে আমি হাসির পাত্র ছাড়া আর কিছুই হলাম
না।যাই হোক, আশা নিয়ে সবার কাছে গেছিলাম কিন্তু হতাশা নিয়ে ফিরে এসে দেখি মা কেমন
জানি হয়ে গেছে। মা বলল কই গেছিলি? আমি বললাম ভাইয়ের কাছে। মায়ের আবেগ জরানো কথা,
আমি যখন ওদের কাছে ছিলাম তখনি আমাকে দিয়ে সব কাজ করাতো কিন্তু আমাকে ঠিকমত খেতে
দিত না আর তুই গেছিস ওদের কাছে......? মায়ের আরো অনেক কথা শুনে কেদে ফেললাম আর মাকে
বললাম তুমি চিন্তা করো না তুমি ঠিক হয়ে যাবে।
যাই হোক মাকে তো বাচাতেই হবে তাই
শেষমেশ মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে শুরু করলাম। আপনার তো সব বুঝতেই পেড়েছেন কি
করেছি আমি। এবার সিদ্ধান্ত নিলাম আমার একটা কিডনি মাকে দেব। এভাবে মানুষের দ্বারে
দ্বারে ঘুরে কিছু টাকা যোগাড় করলাম ভাবছি সামনের সপ্তায় ডাক্তারের কাছে যাবো।
ডাক্তারের কাছে গিয়ে সব বলে ঠিক-ঠাক করে আসলাম। পরেরদিন মাকে নিয়ে যাবো।
বাড়িতে
ফিরে এসে দেখি মা কাঁদছে আর বলছে তোর বাবাকে খুব মনে পরছে। আমি মাকে সান্তনা দিলাম
আর বললাম তুমি ভাল হলে বাবার নামে কোরআন খতম দেবো আর হাফেজদের খাওয়াবো। মা তো
খুশি। রাতে মাকে খাওয়া-দাওয়া করিয়ে আমি মায়ের পাশেই ঘুমিয়ে গেলাম।ফজরের আযান
দিচ্ছে আমি উঠে মাকে ডাকলাম কিন্তু মা আমার কথার জবাব দেয় না। কেমন জানি আত্তার
মধ্যে চিৎকার দিয়ে উঠলো। মায়ের কাছে গিয়ে দেখি মা বাবার কাছে চলে গেছে। আমার
চিৎকারে অনেকে ছুটে এল তারপর যা হবার তাই হল সবাই বুঝায় আর বুঝায়। আমার সব শেষ।
মাকে মাটি দিয়ে এসে ঘরের মধ্যে ইচ্ছামত কাঁদলাম।
কান্না কাটি আর বিষণ্ণ মন নিয়ে গেটে গেলো অনেক গুলো বছর এখন আমার বয়স ২৮।
কষ্টের জীবন পারি দিয়ে এখন আমার অনেক কিছু আছে। কয়েকটা ওয়ার্কশপ এর মালিক হয়েছি।
হাতে সব সময় লাখ লাখ টাকা থাকে আর আমার ভাইয়ের সেই অভাব অনটন আর গেল না কিন্তু
আমার সেই মা টা আজ আমার পাশে নাই। টাকার জন্য মাকে ভাল রাখতে পারি নাই। চিকিৎসা
বিহীন মা মারা গেল। আমার কাছে এ টাকা এখন মূল্যহীন।
যাই হোক, এখন সবার উদ্দেশ্যে
কিছু বলতে চাই। আমার মত জীবন যেন কারো ভাগ্যে আল্লাহ্ না দেন। তবে এখন যাদের টাকা
পয়সা আছে আর বাবা-মা বেঁচে আছে তারা যেন আমার এই গল্প থেকে শিক্ষা নেয় আর
বাবা-মায়ের সাথে ভাল ব্যবহার করে আর তাদের যেন কোন কষ্ট না দেয়। দিন বদলাবে কিন্তু বাবা মাকে
পাশে পাবে না আর ধিক্কার জানাই সেই আত্মীয় স্বজনদের যারা কারো বিপদে পাশে দ্বারায়
না।লাথি মারি সেই সমাজটাকে যে সমাজ মানুষের মূল্য দেয় না।
Bangla Sad Story (পরে থাকা অসমাপ্ত গল্প)
Author- Fuad Alam
❤❤❤❤❤❤❤❤❤
এরকম বাস্তবধর্মী Bangla Sad Story যদি আরো জানতে চান তাহলে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। আমরা নিয়মিন এরকম কষ্টের গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।